বিসিএস ক্যাডার বা একটি ভালো সরকারি চাকরি এমন এক জিনিস যা আপনার পুরো জীবন এমনকি আপনার পরিবার, আপনার ও আপনার পরিবারের সামাজিক অবস্থান নিমিষে বদলে দিতে পারে।
আর সেটা সম্ভব আপনি যদি একটু বেশি কষ্ট করতে পারেন, একটু বেশি যদি ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন! আপনি যদি অন্যদের চেয়ে খানিকটা ব্যতিক্রমী হতে পারেন। আর যদি জীবনে বড় হওয়ার অনেক বড় স্বপ্ন ও তীব্র ইচ্ছা থাকে! তখনই আপনি পারবেন, তখনই আপনার দ্বারা সম্ভবপর হবে!
এখন প্রশ্ন হলো, “বিসিএস ক্যাডার হতে গেলে কীভাবে প্রস্তুতি নেয়া উচিত?”
বিসিএস ক্যাডার হতে গেলে তিনটি ধাপ ধারাবাহিকভাবে সাফল্যের সাথে অতিক্রম করতে হয়। যথা- প্রিলি, রিটিন ও ভাইভা। আমি ৩৪তম-৪০তম বিসিএস পর্যন্ত মোট ৬টি বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৬টিতেই উত্তীর্ণ হয়েছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে থেকে বলছি- বিসিএস ক্যাডার হওয়ার ক্ষেত্রে এই তিনটি ধাপের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছে বিসিএস প্রিলি পাশ করাটা। কারণ এই ধাপে সবচেয়ে প্রতিযোগী থাকে। বিসিএস পরীক্ষার প্রথম ধাপ প্রিলিতেই সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগী ছিটকে পড়ে। কিন্তু আপনি যদি দুটি বিষয় অনুসরণ করতে পারেন তাহলে সহজেই উত্তীর্ণ হতে পারবেন। সেই দুটি বিষয়ের একটি হলো আত্মবিশ্বাস, আর অপরটি হলো কৌশল।
অনেকে মনে করেন, “বিসিএস ক্যাডার হতে গেলে অনেক বেশি পড়তে হয়; যেহেতু আমি অন্যদের মতো এতো বেশি পড়তে পারি না বা পড়ার সুযোগ নেই, অতএব আমার দ্বারা বিসিএস ক্যাডার হওয়া সম্ভবপর নয়।”
এটা ভাবলে সত্যিই আপনি আর বিসিএস ক্যাডার হতে পারবেন না। কারণ আপনি পরীক্ষা দেয়ার আগেই নিজেই নিজের কাছে ফেল করে ফেলেছন!
আগে নিজের কাছে নিজেকে পাশ করতে হয়; তারপর পরীক্ষার হলে! আপনাকে পজিটিভ কিছু ভাবতে হবে। আপনাকে ভাবতে হবে, “আমার দ্বারাই হবে। যারা বিসিএস ক্যাডার হয় তারা ভিনগ্রহ থেকে আসেন নাই; তারা আমার মতোই একজন মানুষ। তারা পারলে আমি পারবো না কেন?”
তাহলে দেখবেন আপনার জন্য কাজটা অনেক সহজ হয়ে গেছে! কারণ যে কোনো কাজ শুরু করার আগে নিজের প্রতি নিজের এই বিশ্বাসটুকু খুবই প্রয়োজন যে, “এই কাজটি আমি পারবো; আমাকে যে পারতেই হবে।”
অনেকে মনে করে, বিসিএস পাশ করা অনেক কঠিন। অনেক বই পড়তে হয়। অনেক বেশি পড়তে হয়।
আবার যারা কম পড়ে বিসিএস ক্যাডার হয়ে গেছে তারা মনে করে, বিসিএস ক্যাডার হতে বেশি পড়া লাগে না; শুধু কিছু টেকনিক ফলো করে পরিকল্পনা মাফিক পড়লেই ক্যাডার হওয়া সম্ভব।
আমার দৃষ্টিকোণ থেকে বলবো, উপরিউক্ত দুটি মতামতই সঠিক।
তবে, আপনি কম পড়েন কিংবা বেশি পড়েন কিছু টেকনিক ফলো না করলে আপনি কখনোই বিসিএস পাশ করতে পারবেন না!
এখন প্রশ্ন হলো টেকনিকগুলো কী?
উত্তর:
১। আপনাকে আগে দেখতে হবে বিসিএস প্রিলিমিনারিতে কোন কোন টপিক থেকে বেশি প্রশ্ন আসে, অর্থাৎ বেশি Important সেগুলো সিলেক্ট করুন। সিলেক্ট করার পর তা পড়ে শেষ করে ফেলুন। এর পর পরীক্ষার মাঝেমধ্যে আসে কিন্তু সবসময় আসে না সেই টপিকগুলো পড়ে ফেলুন! এভাবে বেশি Important ও তুলনামূলক কম Important বিষয়গুলো ভালো করে পড়ে ফেললে আপনার BCS প্রিপারেশন ৭০-৮০% কাভার হয়ে যাবে!
২। পড়ার সময় সেই পড়াগুলো মনে রাখার যথাসাধ্য টেকনিক অবলম্বন করুন।
৩। যে পড়াগুলো মনে থাকে না কিন্তু পরীক্ষার জন্য বেশি Important সেগুলো বার বার পড়ুন এবং পড়ার সময় হালকা শব্দ করে পড়ুন যেন কান পর্যন্ত শব্দ পৌঁছায়। এরপরও মনে না থাকলে লিখে লিখে পড়ুন।
৪। গুরুত্বপূর্ণ সাল, তারিখ ও অপরিচিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নাম (যেগুলো পড়ার পর ভুলে যান) বার বার খাতায় লিখে শব্দ করে পড়ুন।
৫। প্রত্যেক সপ্তাহে আগের পড়াগুলো রিভিশন দিন ও সম্ভব হলে রিভিশনের পড়ার মডেল টেস্ট দিন।
৬। অপ্রয়োজনে ফেইসবুক ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন না। অর্থাৎ এগুলো কম ব্যবহার করবেন।
৭। শেষ কথা হচ্ছে, পড়ার সময় আপনি ফেইসবুক বা মেসেঞ্জার অন রেখে পড়তে বসবেন না। অর্থাৎ, আপনি পড়ছেনও আবার ফেইবুকও চালাচ্ছেন বা মেসেঞ্জারেও চ্যাটিং করছেন এমনটি করবেন না।
.
আর হ্যাঁ, বিসিএস ক্যাডার হতে গেলে অনেক বেশি পড়তে হয় যারা বলে থাকেন, তাদের সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত নয়। আমি মনে করি, পরিকল্পনা মাফিক সঠিক গাইডলাইন অনুযায়ী কেবল Important বিষয়গুলো গুছিয়ে পড়লেই সহজে প্রিলি পাশ করা যায়। কারণ ২০০ নম্বরের বিসিএস প্রিলিতে আপনার ১৮০-১৯০ পাওয়ার দরকার নেই। ১২০ নম্বর পেলেই সাধারণত বিসিএস প্রিলির যেকোনো পরীক্ষায় সেইফ জোন ধরা যায়।
আপনি দেখবেন, ৪৩তম বিসিএস প্রিলিতে অনেকেই প্রথম প্রথম বলেছে, প্রশ্ন সহজ হয়েছে এই প্রশ্নে ১৩০-১৪০ না পেলে প্রিলি পাশ করা পসিবল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী হলো? দেখা গেল ১০৮-১১০ নম্বর পেয়ে টিকেছে!
কিন্তু এতো সহজ প্রশ্নেও এতো কমন নম্বর পাওয়ার কারণ কী?
মূল কারণ হলো, উল্টাপাল্টা প্রয়োজনীয় – অপ্রয়োজনীয় সব প্রশ্ন পড়ে মাথা নষ্ট করার পর পরীক্ষার হলে গিয়ে কমন ও সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েও ভুল করে কিংবা কনফিউজড হয়ে যায়!
.
কিন্তু পরীক্ষার হলে শুধু পারা জিনিসগুলোর উত্তর সঠিকভাবে দিয়ে আসতে পারলে পাশ করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।
.
কিন্তু পরীক্ষার হলে শুধু পারা জিনিসগুলোর উত্তর সঠিকভাবে দিয়ে আসতে পারলে পাশ করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।
তাই আমি বলি, “কম পড়বেন কিন্তু Important বিষয়গুলো গুছিয়ে পড়বেন।”
আরেকটি বিষয় খেয়াল করবেন কেউ এমন আছে যে, অল্প পড়েও বার বার বিসিএস পাশ করছে, আমার কেউ কেউ এমন আছে ৫-৬ বছর ধরে রাত-দিন পড়েও একবারও বিসিএস প্রিলি পাশ করতে পারে না। এখানে মূল কারণ হলো আত্মবিশ্বাস ও পড়ার কৌশিল। বিসিএসে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনি সকল টপিক না পড়ে কি কি টপিক পড়বেন আর কি কি টপিক বাদ দিবেন সেটা সঠিকভাবে সিলেক্ট করা। আর আপনি যদি এই কাজটি করে ফেলতে পারবেন, এখানেই আপনার বিসিএস প্রলি প্রস্তুতি অর্ধেক শেষ! আর বাকি অর্ধেক হলো আপনার পরিশ্রম ও ভাগ্য।
.
*সবাইকে ধন্যবাদ।
___________________
©____ Gazi Mizanur Rahman
*৩৫তম বিসিএস ক্যাডার
*সাবেক সিনিয়র অফিসার
(পূবালী ব্যাংক লিমিটেড)
*সাবেক সহকারী শিক্ষক, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়
(৩৪তম বিসিএস নন-ক্যাডার)
*১০ম NTRCA (প্রভাষক)
*প্রতিষ্ঠাতা: BCS Technique
(BCS স্পেশাল প্রাইভেট প্রোগ্রাম)
©লেখক: BCS Preliminary Analysis
(বাংলাদেশের প্রথম সাজেশনভিত্তিক BCS প্রিলির পূর্ণাঙ্গ বই)